স্বদেশ ডেস্ক:
চুয়াডাঙ্গা জেলার দর্শনা ও জীবননগরের দৌলতগঞ্জকে স্থলবন্দর (স্থল কাস্টমস স্টেশন) হিসেবে ঘোষণা করে গেজেট প্রকাশ করেছে সরকার। গত বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ সরকারের অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের এক প্রজ্ঞাপনে এ ঘোষণা দেয়া হয়। একই প্রজ্ঞাপনে পার্শ্ববর্তী মেহেরপুর জেলার মুজিবনগর বৈদ্যনাথতলাসহ দেশের সীমান্তবর্তী ৫০টি স্থানকে স্থলবন্দর হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে।
এ ঘোষণায় চুয়াডাঙ্গা জেলাবাসী একসাথে দু’টি স্থলবন্দর পেলেন। দর্শনা ও জীবননগরে এই বন্দর দু’টি চালু হলে সহজেই আমদানি-রফতানি করা যাবে। এতে দ্রুত পাল্টে যাবে চুয়াডাঙ্গার অর্থনীতি। এ ছাড়া সড়কপথে কমবে দেশের অন্য স্থলবন্দর থেকে রাজধানীর দূরত্ব। স্থানীয় শত শত মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হবে এখানে।
বর্তমানে যশোর বেনাপোল বন্দর দিয়ে ৫০০-৬০০ ট্রাক আসা-যাওয়া করে। সেগুলো খালাস করতে তিন থেকে ১৮ দিন পর্যন্ত সময় লেগে যায়। এতে দারুণভাবে আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েন সংশ্লিষ্টরা। দর্শনা ও দৌলতগঞ্জ পূর্ণাঙ্গ স্থলবন্দর হলে সেখান দিয়ে প্রতিদিন কমপক্ষে ২০০টি ট্রাকের পণ্য খালাস করা সম্ভব হবে, এতে বেনাপোল স্থলবন্দরের ওপর থেকে যেমন চাপ কমবে, তেমনি আমদানি-রফতানি সংশ্লিষ্টদের আর্থিক ক্ষতি অনেকটাই কমে আসবে।
চুয়াডাঙ্গা চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি ইয়াকুব হোসেন মালিক বলেন, বন্দর চালু হলে ব্যবসার ক্ষেত্রে নতুন সম্ভাবনা জাগ্রত হবে। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ব্যবসায়ীরা ছুটে আসবেন এখান দিয়ে পণ্য আমদানির জন্য। পাল্টে যাবে চুয়াডাঙ্গা জেলার অর্থনৈতিক দৃশ্যপট।
জানা যায়, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় এর আগে ২০১৩ সালের ৩১ জুলাই জীবননগর দৌলতগঞ্জ শুল্ক স্টেশনটিকে পূর্ণাঙ্গ স্থলবন্দর ঘোষণা করে গেজেট প্রকাশ করেছিল। সে সময় একই বছর ২৪ আগস্ট তৎকালীন নৌপরিবহনমন্ত্রী মোহাম্মদ শাজাহান খান চালুর অপেক্ষায় থাকা এই বন্দরের ভিত্তিপ্রস্তরও উদ্বোধন করে গিয়েছিলেন। এরপর ২০১৪ সালের ৪ জুন তৎকালীন নৌপরিবহনমন্ত্রী মোহাম্মদ শাজাহান খান ও তৎকালীন ভারতীয় রাষ্ট্রদূত পংকজ শরন আবারো বন্দরের জন্য প্রস্তাবিত জায়গা পরিদর্শন করেন। সেই সময় এই ভারত-বাংলাদেশ সরকারের দুই ঊর্র্ধ্বতন কর্তা দ্রুত সময়ে বন্দরটি চালুর ঘোষণা করলেও পরে এক অদৃশ্য কারণে সে উদ্যোগ থমকে যায়।
জীবননগর স্থলবন্দর সূত্র জানা যায়, ১৯৫৩ থেকে ১৯৬৫ সাল পর্যন্ত দৌলতগঞ্জ-মাজদিয়া স্থলবন্দরটি শুল্ক স্টেশন হিসেবে চালু ছিল। কিন্তু ১৯৬৫ সালে পাক-ভারত যুদ্ধের সময় শুল্ক স্টেশনটি বন্ধ হয়ে যায়। পরে বাংলাদেশ সরকারের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ১৯৭২ সালে শুল্ক স্টেশনটি ফের চালুর নির্দেশ দেয়। পরবর্তীতে আবারো এটি বন্ধ হয়ে যায়। এরপর ১৯৯৮ সালের ১৫ জুলাই জাতীয় রাজস্ব বোর্ড আবার শুল্ক স্টেশনটি চালুর প্রজ্ঞাপন জারি করে বন্দরটিতে ১৯টি পণ্য আমদানির অনুমতি দেয়। পরবর্তীতে ২০০৯ সালের ১১ জুন আরেকটি প্রজ্ঞাপনে শুল্ক স্টেশন কার্যকর করতে সংশ্লিষ্ট সব দফতরকে নির্দেশ দেয় জাতীয় রাজস্ব বোর্ড। সেটাও আলোর মুখ দেখেনি। এখন চূড়ান্ত গেজেট প্রকাশের পর দেখার বিষয় কত দিনে তা বাস্তবায়ন হয়।
জানা যায়, দৌলতগঞ্জ-মাজদিয়া স্থলবন্দর সড়ক যোগাযোগ ও অবকাঠামোগত সব সুবিধা বিদ্যমান রয়েছে। বন্দরটি থেকে ভারতের জাতীয় সড়কের দূরত্ব ৩৪ কিলোমিটার। ঢাকার সাথে দূরত্ব ২৪০ কিলোমিটার। তা ছাড়া ভারতীয় অংশে জাতীয় মহাসড়ক থেকে সব স্থানে যাতায়াত করা সম্ভব। জাতীয় সড়ক থেকে দেশের অন্যান্য স্থলবন্দরের যে দূরত্ব, তার থেকে অনেক কম দূরত্ব অর্থাৎ ২৫ কিলোমিটার দৌলতগঞ্জ-মাজদিয়া স্থলবন্দর। যার কারণে ভারতের সাথে দেশের অন্যান্য স্থলবন্দরের চেয়ে দ্রুত সময়ে পণ্য আমদানি এবং রফতানি ও পরিবহন খরচ অনেকাংশে সাশ্রয়ী হবে।
দর্শনা রেলপথ দিয়ে বর্তমানে বাংলাদেশ-ভারত থেকে পণ্য আমদানি ও রফতানি কার্যক্রম চলমান রয়েছে ১৯৬২ সাল থেকে। দর্শনায় আগে থেকেই রয়েছে কাস্টমস শুল্ক স্টেশন, আন্তর্জাতিক রেলস্টেশন, কোয়ারেন্টিন ল্যাবরেটরি, অভ্যন্তরীণ রেলস্টেশন, ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট ও বিজিবির ছয়টি ক্যাম্প।
দর্শনা জয়নগর স্থলবন্দর : এ বন্দরের রুট হলো দর্শনা-গেদে রেলপথ ও সড়কপথ। এ বন্দর দিয়ে যেসব পণ্য আমদানি করা যাবে, সেগুলো হলো- গবাদিপশু, মাছের পোনা, তাজা ফলমূল, গাছ-গাছড়া, বীজ, গম, পাথর (ঝঃড়হবং ধহফ নড়ঁষফবৎং), কয়লা, রাসায়নিক সার, চায়না ক্লে, কাঠ, টিম্বার, চুনাপাথর, পেঁয়াজ, মরিচ, রসুন, আদা, বলক্লে, কোয়ার্টজ, চাল, ভুসি, ভুট্টা, বিভিন্ন প্রকার খৈল, পোলট্রি ফিড, ফ্লাই অ্যাশ, রেলওয়ে স্লিপার, বিল্ডিং স্টোন, রোড স্টোন, স্যান্ড স্টোন, বিভিন্ন প্রকার ক্লে, গ্রানুলেটেড স্ল্যাগ, জিপসাম, স্পঞ্জ আয়রন, পিগ আয়রন, ক্লিংকার, কোয়ার্টজ, ডাল, কাঁচা তুলা ও তুলার বেল। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে সব পণ্য এ বন্দর থেকে রফতানি করা যাবে। তবে অবকাঠামো উন্নয়ন না হওয়া পর্যন্ত কেবল রেলপথে আমদানি-রফতানি করার কথা বলা হয়েছে।
জীবননগর দৌলতগঞ্জ স্থলবন্দর : এ স্থলবন্দরের রুট হলো দৌলতগঞ্জ-মাজদিয়া রোড সড়কপথ। এ বন্দর দিয়ে যেসব পণ্য আমদানি করা যাবে, সেগুলো হলো- গবাদিপশু, মাছের পোনা, তাজা ফলমূল, গাছ-গাছড়া, বীজ, গম, পাথর (ঝঃড়হবং ধহফ নড়ঁষফবৎং), কয়লা, রাসায়নিক সার, চায়না ক্লে, কাঠ, টিম্বার, চুনাপাথর, পেঁয়াজ, মরিচ, রসুন, আদা, বলক্লে ও কোয়ার্টজ। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে সব পণ্য এ বন্দর থেকে রফতানি করা যাবে।
মুজিবনগর বৈদ্যনাথতলা স্থলবন্দর : এ স্থলবন্দরের রুট হলো স্বাধীনতা সড়ক (মেহেরপুর-মুজিননগর-চাপড়া-কৃষ্ণনগর সড়ক) সড়কপথ। এ বন্দর দিয়ে পণ্য আমদানি করা যাবে, সেগুলো হলো- মাছ, সুতা, গুঁড়া দুধ, চিনি ও আলু (ঐঝ ঈড়ফব ০৭০১.৯০.১৯ ও ০৭০১.৯০.২৯) ছাড়া জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের প্রজ্ঞাপন এস.আর.ও নং ১৪/ডি/কাস/৭২, তারিখ : ২৯-০৪-৭২ এর টেবিলের পার্ট-ঠও এর অধীনে সুনির্দিষ্টকৃত ওজনের মালামাল এবং প্যাসেঞ্জার ব্যাগেজ (চধংংবহমবৎং নধমমধমবং)।